প্রতি ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডার: জরুরি স্বাস্থ্যের এক নতুন দিগন্ত

ছবি
 কোভিড-১৯ মহামারীর সময় আমরা সবাই দেখেছি, অক্সিজেনের অভাবে কিভাবে অসংখ্য মানুষ অসহায়ভাবে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার, এক একটি সিলিন্ডারের জন্য লম্বা লাইন—এসব দৃশ্য আমাদের এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই সংকট আমাদের শিখিয়েছে যে, জীবন বাঁচাতে অক্সিজেন কতটুকু অপরিহার্য এবং একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কত বড় আশীর্বাদ হতে পারে। তাই এখন সময় এসেছে একটি নতুন ভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়ার: প্রতিটি ঘরে অন্তত একটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা। এটি শুধু একটি জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম নয়, বরং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা। এর ফলে জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা যেমন বাড়বে, তেমনি হাসপাতালগুলোর ওপর থেকেও চাপ কমবে। কেন প্রতি ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকা জরুরি? অক্সিজেন মানুষের জীবনের জন্য সবচেয়ে মৌলিক উপাদান। শ্বাসকষ্টজনিত যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে, তা যতই অপ্রত্যাশিত হোক না কেন, অক্সিজেনের দ্রুত সরবরাহ জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। নিচে এমন কিছু পরিস্থিতি তুলে ধরা হলো যেখানে ঘরে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলে তা জীবন রক্ষাকারী হতে পারে...

ক্ষমতার পাল্টে যাওয়া মানচিত্র: ব্রিকস - একুশ শতকের নতুন বিশ্বশক্তি?


 

ক্ষমতার পাল্টে যাওয়া মানচিত্র: ব্রিকস - একুশ শতকের নতুন বিশ্বশক্তি?

ভূমিকা: বিশ্ব মঞ্চে এক অভাবনীয় উত্থান

একুশ শতকের ভোরে যখন বিশ্ব পুরোনো মেরুকরণ থেকে বেরিয়ে নতুন এক ভারসাম্যের সন্ধানে ছিল, তখনই কানে এল এক নতুন শব্দ – "BRIC"। শুরুটা হয়েছিল অর্থনীতির এক সরল ধারণা হিসেবে, কিন্তু দ্রুতই তা পরিণত হলো বৈশ্বিক ক্ষমতার কেন্দ্রে এক শক্তিশালী জোটের নামে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকা – এই পাঁচটি দেশের সম্মিলিত শক্তি আজ বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ব্রিকস কি তবে কেবল একটি অর্থনৈতিক ফোরাম, নাকি এটি বিশ্ব ব্যবস্থার পুরোনো ছক ভেঙে দেওয়ার এক নতুন চালিকা শক্তি? চলুন, এই জোটের উত্থান, উদ্দেশ্য আর ভবিষ্যতের পথরেখা ধরে হেঁটে আসি।

ব্রিকসের ঐতিহাসিক যাত্রা: একটি ধারণা থেকে বৈশ্বিক শক্তি

২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে, যখন পশ্চিমা দেশগুলো বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছিল, ঠিক তখনই গোল্ডম্যান স্যাকসের দূরদর্শী অর্থনীতিবিদ জিম ও'নিল ২০০১ সালে একটি সাহসী ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তাঁর গবেষণাপত্র "The World Needs Better Economic BRICs" এ তিনি দেখান যে, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চীনের মতো উদীয়মান অর্থনীতিগুলো (একসাথে 'BRIC' নামে পরিচিত) আগামী কয়েক দশকে বিশ্ব অর্থনীতিতে অভাবনীয় প্রভাব ফেলবে। ও'নিলের এই ধারণা ছিল এক বীজ, যা দ্রুতই অঙ্কুরিত হতে শুরু করে।

২০০৬ সালে, সেন্ট পিটার্সবার্গে জি৮ সম্মেলনের ফাঁকে এই চারটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একত্রিত হন, যা ছিল ব্রিকসের আনুষ্ঠানিক যাত্রার প্রথম মাইলফলক। এখান থেকেই শুরু হয় নিয়মিত সংলাপ এবং সহযোগিতার পথ। এর ফলস্বরূপ, ২০০৯ সালে রাশিয়ার ইয়েকাটেরিনবার্গে অনুষ্ঠিত হয় ব্রিকের প্রথম আনুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলন শুধু একটি বৈঠক ছিল না, বরং ছিল বিশ্ব মঞ্চে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সম্মিলিত কণ্ঠস্বর প্রতিষ্ঠার প্রথম দৃঢ় পদক্ষেপ।

এরপর, ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার যোগদানে ব্রিক (BRIC) পূর্ণতা পেয়ে হয় ব্রিকস (BRICS)। আফ্রিকা মহাদেশের এই অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির সংযুক্তি জোটের ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বকে আরও বাড়িয়ে দেয় এবং বিশ্ব মঞ্চে এর প্রভাবকে আরও জোরালো করে তোলে। ব্রিকস আর কেবল একটি অর্থনৈতিক ধারণা রইল না, বরং হয়ে উঠল একটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক জোটে, যা পশ্চিমা আধিপত্যের বিপরীতে একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার স্বপ্ন দেখছিল।

কেন ব্রিকস? উদ্দেশ্য ও আকাঙ্ক্ষার মেলবন্ধন

ব্রিকস নিছকই কিছু দেশের একত্রিত হওয়ার ঘটনা নয়, এর পেছনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য এবং একুশ শতকের বিশ্বকে নতুনভাবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা:

 * অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা ও সহযোগিতা: ব্রিকসের মূল লক্ষ্য হলো সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক বিনিময়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থার উপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করে লেনদেন বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়। এটি সদস্য দেশগুলোকে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে আরও স্থিতিশীলতা এনে দেয়।

 * বহুমুখী বিশ্ব ব্যবস্থার স্বপ্ন: বহু দশক ধরে বিশ্ব ব্যবস্থা ছিল মূলত এককেন্দ্রিক, যেখানে পশ্চিমা দেশগুলোর বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ছিল অনস্বীকার্য। ব্রিকস এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি বহুমুখী বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। তারা চায়, বিশ্বব্যাপী সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠস্বর আরও জোরালো হোক।

 * উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব: 'গ্লোবাল সাউথ' বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করা ব্রিকসের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। তারা চায় আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আরও বেশি ক্ষমতা ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে।

 * যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা: জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ, খাদ্য নিরাপত্তা, এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটের মতো জটিল চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং যৌথ উদ্যোগ নেওয়া ব্রিকসের এজেন্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বিস্তারিত: ব্রিকসের কাঠামো, অর্জন এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

ব্রিকস কোনো ঐতিহ্যবাহী আন্তর্জাতিক সংস্থা নয়; এর কোনো স্থায়ী সদর দপ্তর বা নির্দিষ্ট প্রশাসনিক কাঠামো নেই। বরং এটি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একটি গতিশীল সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম। প্রতি বছর একজন সদস্য দেশ এর সভাপতিত্ব করে এবং বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করে, যেখানে রাষ্ট্রপ্রধানরা একত্রিত হন।

ব্রিকসের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB) প্রতিষ্ঠা। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি বিশ্বব্যাংক এবং IMF-এর একটি বিকল্প হিসেবে কাজ করে, যা ব্রিকস এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, পরিবহণ এবং টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করে। এছাড়াও, কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারেঞ্জমেন্ট (CRA) নামে একটি আর্থিক সহায়তা তহবিলও গঠন করা হয়েছে, যা সদস্য দেশগুলোকে মুদ্রার সংকট বা স্বল্পমেয়াদী তারল্য সমস্যায় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।

সম্মিলিতভাবে, ব্রিকস দেশগুলো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪১%, বৈশ্বিক জিডিপির ৩০% এরও বেশি এবং বিশ্ব বাণিজ্যের একটি বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এই পরিসংখ্যানই ব্রিকসের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়। তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তাদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বরকে জোরালোভাবে তুলে ধরেছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

তবে, ব্রিকসের পথ মসৃণ নয়। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ভিন্ন অর্থনৈতিক মডেল, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের ভিন্নতা অনেক সময় সমন্বয় সাধনে বাধা সৃষ্টি করে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনও জোটের ঐক্যবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

ভবিষ্যতের দিগন্ত: সম্প্রসারণের ঢেউ

ব্রিকস সম্প্রতি তার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে গেছে। ২০২৪ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সম্প্রসারণ ব্রিকসের প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা মহাদেশে। এটি শুধু ব্রিকসের অর্থনৈতিক ওজনই বাড়ায়নি, বরং বিশ্বব্যাপী এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকেও নতুন মাত্রা দিয়েছে।

ব্রিকস এখন বিশ্ব অর্থনীতির পাল্টে যাওয়া মানচিত্রের এক অগ্রদূত। পশ্চিমা আধিপত্যের বিপরীতে একটি শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার এই যাত্রা কেবল শুরু। ব্রিকস কি পারবে একুশ শতকের বিশ্বকে একটি সত্যিকারের বহুমুখী, ভারসাম্যপূর্ণ এবং ন্যায্য ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করতে? সময়ই এর উত্তর দেবে, তবে নিঃসন্দেহে ব্রিকস এখন বিশ্ব মঞ্চের এক অনস্বীকার্য শক্তি।।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০২৫ সালে বাংলাদেশের সেরা ১০টি হিডেন ট্র্যাভেল স্পট – যা এখনো অনেকেই জানে না! 📅 প্রকাশকাল: ৮ জুন ২০২৫

ইরান ও ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতা: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ

ট্রাম্প বনাম মাস্ক: প্রযুক্তির টাইকুন ও রাজনীতির মহারথীর প্রকাশ্য দ্বৈরথ