প্রতি ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডার: জরুরি স্বাস্থ্যের এক নতুন দিগন্ত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর জন্য প্রধানত দায়ী আমাদেরই কিছু অবচেতন ব্যবহারগত অভ্যাস। শুধু ব্যাটারির আয়ু কমে যাওয়া নয়, অনেক সময় এই অভ্যাসগুলোই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়—যেমন, চার্জ দেওয়ার সময় ফোন বিস্ফোরণের ঘটনা। সম্প্রতি দেশে-বিদেশে এমন বহু ঘটনার খবর এসেছে।
সারা রাত ফোন চার্জে রাখা
রাতভর ফোন চার্জে রাখার অভ্যাস অনেকেরই রয়েছে। সাধারণভাবে মনে করা হয়, ফোন একবার পুরোপুরি চার্জ হয়ে গেলে আর কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধারণা ঠিক নয়। ফোন ১০০ শতাংশ চার্জ হয়ে গেলেও, বিদ্যুৎ সংযোগ চালু থাকলে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয় ব্যাটারির ওপর। দীর্ঘমেয়াদে এটি ব্যাটারির অভ্যন্তরীণ কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ফোন অতিরিক্ত গরম হতে থাকে। বিশেষ করে নিম্নমানের চার্জার ব্যবহার করা হলে এমন অবস্থায় ফোন বিস্ফোরণও ঘটতে পারে।
চার্জ দেওয়ার সময় ফোন ব্যবহার
ফোন চার্জ দেওয়ার সময় অনেকে একটানা ভিডিও দেখে, গেম খেলে কিংবা কল করে থাকেন। এতে ফোনের প্রসেসর ও ব্যাটারির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। একদিকে ফোন চার্জ নিচ্ছে, অন্যদিকে সেটি আবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। ফলে ব্যাটারির তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এর ফলাফল হতে পারে ব্যাটারি ফুলে যাওয়া, অভ্যন্তরীণ সার্কিটে ত্রুটি, এমনকি বিস্ফোরণ।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের ঘটনার নজির রয়েছে। অতিরিক্ত গরম হয়ে চার্জের সময় ফোন ফেটে যাওয়ার ঘটনায় অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। এ কারণে চার্জ দেওয়ার সময় ফোন ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন প্রযুক্তিবিদেরা।
সস্তা বা নকল চার্জার ব্যবহার
মূল ফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের চার্জার ব্যবহার না করে অনেকেই কম দামে কেনা চার্জার বা ক্যাবল ব্যবহার করেন। এ ধরনের চার্জারের ভেতরে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না। ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে ব্যাটারির ভেতর শর্ট সার্কিটের সম্ভাবনা তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, চার্জার বিস্ফোরণ বা স্পার্ক থেকে আগুন লেগে গেছে।
২০১৯ সালে ঢাকার এক বাসিন্দা রাতে ফোন চার্জে রেখে ঘুমিয়ে ছিলেন। সস্তা চার্জারের কারণে ফোনটি অতিরিক্ত গরম হয়ে বিস্ফোরিত হয় এবং ঘরের কিছু অংশে আগুন ধরে যায়। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে মানসম্মত এবং নির্ভরযোগ্য চার্জার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ফোন গরম থাকা অবস্থায় চার্জ দেওয়া
অনেক সময় দেখা যায়, দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার বা রোদে থাকার ফলে ফোন গরম হয়ে গেছে। এরকম অবস্থায় সঙ্গে সঙ্গে চার্জ দেওয়ার প্রবণতা আরও ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ গরম ব্যাটারিতে চার্জ প্রবেশ করালে তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায়, যা ব্যাটারির ভেতরে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এর ফলেও ব্যাটারি ফুলে যাওয়া, ফেটে যাওয়া কিংবা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফোন ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত চার্জ দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস ও দ্রুত চার্জ শেষ হওয়া
অনেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী খেয়াল করে থাকেন, ফোন ব্যবহার না করলেও ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যায়। এর কারণ, ফোনে থাকা বিভিন্ন অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকে এবং নিয়মিত ডেটা আদান-প্রদান করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ, গেম, নিউজ অ্যাপ ইত্যাদি এর জন্য দায়ী।
যদিও এতে সরাসরি বিস্ফোরণের ঝুঁকি না থাকলেও, ফোন গরম হওয়ার অন্যতম কারণ এই অ্যাপগুলো। অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকেই পরবর্তী সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ফোন বিস্ফোরণের বাস্তবতা ও সতর্কতা
বিশ্বজুড়ে অনেক স্মার্টফোন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে চার্জ দেওয়ার সময় ফোন ফেটে যাওয়ার ঘটনা অধিকাংশ সময় ব্যাটারির অতিরিক্ত চাপের কারণে ঘটে থাকে। ইউরোপ, ভারত, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে এমন দুর্ঘটনায় মানুষ আহত হয়েছেন বা মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গবেষণা বলছে, এসব দুর্ঘটনার পেছনে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী ছিল ব্যবহারকারীর অসচেতনতা।
করণীয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, মোবাইল ব্যাটারিকে দীর্ঘস্থায়ী রাখতে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু বিষয় মেনে চলা উচিত। যেমন—
ফোনের চার্জ ২০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে চার্জ দেওয়া উচিত, এবং ৮০ শতাংশ চার্জ হয়ে গেলে চার্জার খুলে ফেলা উচিত
রাতে ফোন চার্জে রেখে ঘুমানো থেকে বিরত থাকা
গরম অবস্থায় ফোন চার্জ না দেওয়া
ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস বন্ধ রাখা
অবশ্যই মূল কোম্পানির চার্জার ও ক্যাবল ব্যবহার করা
তেমনি কিছু বিষয় আছে যা কখনোই করা উচিত নয়। যেমন:
চার্জ দেওয়ার সময় ফোন ব্যবহার করা
নকল বা সস্তা চার্জার ব্যবহার করা
ফুলে ওঠা ব্যাটারিকে অবহেলা করা
চার্জ চলাকালীন ফোন বালিশের নিচে রাখা বা ঢাকা দিয়ে রাখা
শেষ কথা
স্মার্টফোন আমাদের জীবনের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে, একটি সামান্য ত্রুটিও বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা প্রযুক্তিকে দোষ দেই, কিন্তু আসল সমস্যা তৈরি হয় আমাদের ভুল ব্যবহার ও অসচেতনতার কারণে।
একটি ছোট ব্যাটারি, একটি ছোট চার্জার—এগুলোকে অবহেলা না করে সতর্কভাবে ব্যবহার করলেই একদিকে যেমন ডিভাইস দীর্ঘদিন ভালো থাকবে, তেমনি বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও অনেকটাই কমে যাবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য লিখুন