প্রতি ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডার: জরুরি স্বাস্থ্যের এক নতুন দিগন্ত

বিশ্ব অর্থনীতির উদীয়মান শক্তিগুলোর জোট ব্রিকস (BRICS) এর ১৭তম সম্মেলন ৬ থেকে ৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে ব্রাজিলের ঐতিহাসিক শহর রিও ডি জেনিরোতে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা-এর সভাপতিত্বে এই সম্মেলনটি 'আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শাসনের জন্য গ্লোবাল সাউথ সহযোগিতা জোরদার করা' ("Strengthening Global South Cooperation for More Inclusive and Sustainable Governance") - এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। এই সম্মেলন শুধু ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর মধ্যেই নয়, বরং বৃহত্তর গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সম্মেলনের মূল আকর্ষণ ও আলোচিত বিষয়বস্তু:
২০২৫ সালের ব্রিকস সম্মেলন বিভিন্ন দিক থেকে ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এর প্রধান দিকগুলো হলো:
১. ইন্ডোনেশিয়ার পূর্ণ সদস্যপদ লাভ: এই সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকস জোটের ১১তম পূর্ণ সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছে। এটি ব্রিকস-এর সম্প্রসারণ এবং বৈশ্বিক প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধিতে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। ইন্দোনেশিয়ার যোগদান ব্রিকস-এর অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২. নতুন ব্রিকস অংশীদার দেশগুলোর সংযুক্তি: সম্মেলনের একটি বড় অর্জন ছিল আরও ১১টি নতুন দেশকে 'ব্রিকস অংশীদার দেশ' হিসেবে স্বাগত জানানো। এই পদক্ষেপ ব্রিকস জোটের প্রভাববলয়কে আরও বিস্তৃত করবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়াকে শক্তিশালী করবে।
৩. অর্থনীতি ও বাণিজ্য: সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
৪. জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়ন: বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্রিকস দেশগুলোর সম্মিলিত ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ন্যায্য অংশীদারিত্বের আহ্বান জানানো হয়।
৫. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) গভর্নেন্স: উদীয়মান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর সুষ্ঠু ও নৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে এর শাসন (governance) ব্যবস্থা নিয়ে সদস্য দেশগুলো তাদের ভাবনা আদান-প্রদান করে। AI প্রযুক্তির সুবিধাগুলো যাতে সকল দেশের জন্য প্রবেশগম্য হয়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়।
৬. বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা: বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান সংঘাত ও অস্থিরতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বহুপাক্ষিক শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং জাতিসংঘের কাঠামোতে সংস্কার আনার বিষয়ে ব্রিকস দেশগুলো তাদের যৌথ অবস্থান তুলে ধরেছে।
৭. স্বাস্থ্য ও ঔষধের সহজলভ্যতা: কোভিড-১৯ মহামারীর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সহযোগিতা এবং ঔষধ ও ভ্যাকসিনের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার উপর জোর দেওয়া হয়। ভবিষ্যৎ মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে গবেষণা ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার করা হয়।
গ্লোবাল সাউথের ক্রমবর্ধমান প্রভাব:
২০২৫ সালের রিও সম্মেলন ব্রিকস জোটের 'গ্লোবাল সাউথ'-এর কণ্ঠস্বর হিসেবে ক্রমবর্ধমান ভূমিকাকে আরও স্পষ্ট করেছে। পশ্চিমা দেশ-কেন্দ্রিক বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থার বাইরে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ব্রিকস তার অবস্থানকে দৃঢ় করছে। ইন্দোনেশিয়ার যোগদান এবং নতুন অংশীদার দেশগুলোর অন্তর্ভুক্তি ব্রিকস-এর অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিরই প্রতিফলন।
উপসংহার:
ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ২০২৫ সালের ব্রিকস সম্মেলন ছিল বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা ও আকাঙ্ক্ষার এক স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। এই সম্মেলন শুধু ব্রিকস দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে নয়, বরং বৃহত্তর বিশ্ব মঞ্চে তাদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বরকে আরও জোরদার করতে সহায়ক হবে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় পারস্পরিক সহযোগিতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির ওপর জোর দিয়ে ব্রিকস জোট আগামী দিনে বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য লিখুন